Blog
Building Trust Among Customers is Main Challenge for Development Insurance Sector
বিমা খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই প্রথম কাজ
বাংলাদেশে বীমা খাতের সম্ভাবনা কেমন?
আমরা জানি, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৩৬টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে এবং বাংলাদেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পেনেট্রেশন যদি দেখি সেটা জিডিপির ০.৪% থেকে একটু বেশি, যা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন। এ সংখ্যা দিয়েই বোঝা যাচ্ছে, এখানে অপার সম্ভাবনা আছে। আমাদের কাছে মনে হয়, ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমরা যদি সঠিক প্রোডাক্টস নিয়ে আসতে পারি এবং সঠিকভাবে আমাদের ক্লায়েন্টদের বীমা দাবি পূরণ করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে এই পেনিট্রেশন ৪ শতাংশের ওপর। জাপানে এটি ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি। বর্তমান অবস্থা থেকে আমরা যদি আমাদের পেনেট্রেশন ১ শতাংশও বাড়াতে পারি তাহলেও আমাদের প্রিমিয়াম ও পলিসি হোল্ডার নাম্বার অনেক বাড়বে। তাই আমি বলব, বাংলাদেশে বীমা খাতের অপার সম্ভাবনা আছে।
শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লক্ষ্য কী?
শান্তা এরই মধ্যে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। যদি লক্ষ করেন, শান্তা যেই খাতে এসেছে সেই খাতেই শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আমরা ব্যবসার প্রচলিত ধারণাকে সবসময় চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। ইন্স্যুরেন্সের যে ধারণা আছে—পলিসি ওপেন করা একটি লম্বা প্রসেস এবং বীমা দাবি পূরণের জন্য কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যায়—সেই জায়গা থেকে আমরা বের হয়ে দ্রুত সময়ে এবং সহজ পদ্ধতিতে কাস্টমারকে আমাদের সব সার্ভিস দিতে চাই। শান্তা লাইফ থেকে আমরা ইন্স্যুরেন্সকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই।
নতুন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হিসেবে শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী নিয়ে আসছে?
বাংলাদেশের ৩৬টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে শান্তা লাইফ সবচেয়ে নতুন। আমাদের লক্ষ্য গুড গভর্ন্যান্সের মধ্য দিয়ে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আমাদের কাস্টমারদের বেস্ট সার্ভিস প্রদান করা। ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা যে চ্যালেঞ্জ ফেস করি সেটির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, গুড গভর্ন্যান্স আছে এমন প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা। শীর্ষ ছয় থেকে সাতটি কোম্পানিই সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে। নতুন কোম্পানি হিসেবে শান্তা লাইফ গুড গভর্ন্যান্সকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। এছাড়া শান্তা লাইফ নতুন ইনোভেটিভ প্রোডাক্টস মার্কেটে নিয়ে আসতে চায়। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা গেছে, সবাই ট্র্যাডিশনাল প্রোডাক্টগুলোই এখনো মার্কেট করছেন; ভিন্নতা খুব কম। শান্তা লাইফ থেকে আমরা ইনোভেটিভ ও সহজ প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে চাই, যার মধ্যে গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসেবা পলিসি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। আরেকটি জায়গায় আমরা কাজ করতে চাই, সেটি হচ্ছে ডিজিটালাইজেশন। আইটি ও ডিজিটালাইজেশনে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই, যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমারদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারি।
বীমা খাতে প্রচলিত ধ্যানধারণার বিপরীতে শান্তা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কীভাবে কাজ করতে চাচ্ছে?
ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে—মানুষের কাছে মৃত্যুভয়কে সেল করা। শান্তা লাইফ থেকে আমরা জীবনের কথা বলতে চাই। নিজ ও নিজের পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে চাই। ইনোভেটিভ প্রোডাক্টস, ডিজিটালাইজেশন এবং কাস্টমার সার্ভিসকে এমনভাবে তৈরি করতে চাই যেন মানুষ ইন্স্যুরেন্সকে ঝামেলা মনে না করে বরং প্রয়োজনীয় সেবা মনে করে।
বীমা খাতের উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত?
বীমা খাতে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আস্থার অভাব। কেন আস্থা নেই সেটিও আমরা সবাই জানি এবং সুনির্দিষ্ট কারণগুলোও জানি। সুতরাং এ আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে বীমা খাতের প্রথম কাজ। সাধারণত আপনারা দেখবেন, বীমা নিয়ে মানুষ কথা বলতে চায় না এবং এটার মূল কারণ হলো আস্থা। যদি আস্থা ফিরিয়ে এনে বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মানুষের সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা যায় তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের বীমা খাতও অনেক এগিয়ে যাবে। এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলো, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান ও ভারতে বীমা একটি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটিকে কোনো বিলাসী প্রোডাক্ট ধরা হয় না। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকেই যদি চিন্তা করেন, আমাদের দেশের চিকিৎসা খাতের খরচ কিন্তু অনেক বেড়ে যাচ্ছে, অ্যাকসিডেন্ট অনেক বেড়ে গেছে, ক্রিটিক্যাল রোগে অনেক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এবং এর জন্য একটি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের ওপর যে আর্থিক চাপ তৈরি হয় তা থেকে উত্তরণ এ পরিবারগুলোর জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থার জায়গা তৈরি করা বীমা খাতের উন্নয়নের জন্য এক নম্বর কাজ। দ্বিতীয়ত, নতুন নতুন প্রোডাক্ট যেটি মানুষের প্রয়োজনকে মেটাবে সে রকম প্রোডাক্ট আনতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা কভিডের সময় প্রকাশ হয়েছে। আমরা মনে করি, এ খাতে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আনতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ অনেক উপকৃত হবে এবং ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রি আমাদের দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সর্বশেষ, ডিজিটালাইজেশন হতে পারে তৃতীয় পদক্ষেপ। অনেক কোম্পানিতে দেখা যায়, পলিসি ক্রয়ের পরও তার ডকুমেন্টস আসতে এক মাসের ওপর সময় লেগে যায়, আবার বীমা দাবি পূরণের জন্য একটি পরিবার বছরের পর বছর ভোগান্তিতে থাকে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ডিজিটালাইজেশন এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। আরো অনেক জায়গা ইমপ্রুভমেন্টের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এ তিন জায়গায় ফোকাস করে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নয়ন শিগগিরই সম্ভব।
বীমা খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পারে?
বেশির ভাগ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেখবেন, এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। পৃথিবী এগিয়ে গেছে, বাংলাদেশের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি, যেমন এমএফএস, ব্যাংকিং—এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো কিন্তু গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা করে। প্রযুক্তিতে উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। একটি পলিসি গ্রহণ করা থেকে বীমা দাবি পূরণ পর্যন্ত পুরো প্রসেসটিকে আমরা যদি ডিজিটালাইজড করে ফেলতে পারি তাহলে দীর্ঘমেয়াদে কিন্তু কোম্পানির জন্যই লাভ। ডিজিটালি অ্যাডভান্স হতে পারলে গ্রাহক দ্রুত সেবা পাবে, জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে যাবে, গ্রাহক নিজের প্রয়োজনমতো পলিসি বাছাই করতে পারবে। শুরুতে কিছু বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, কিন্তু যদি আমরা আমাদের প্রসেসকে সহজ ও দ্রুত সময়ে কমপ্লিট করতে পারি তাহলে গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিসি নম্বরও বৃদ্ধি পাবে, যেটি ভবিষ্যতে কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল ভিত্তিকে আরো মজবুত করবে।
বাজেটে বীমা খাতের জন্য আপনাদের প্রত্যাশা কী?
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূলত রাজস্ব আহরণ ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তথাপি বীমা খাতকে জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করতে প্রিমিয়ামে ইনকাম ট্যাক্স রিবেট বাড়ানো, করপোরেট করহার হ্রাস বা ইনসেনটিভ-ভিত্তিক সেভিংস বন্ডের মাধ্যমে বীমা সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ থাকলেও নেয়া হয়নি। বর্তমানে জীবন বীমার প্রিমিয়ামে আয়কর রেয়াত সীমিত, যা বাড়ানো হলে মধ্যবিত্ত ও তরুণ জনগোষ্ঠী বীমার প্রতি আরো আগ্রহী হবে। এছাড়া বাজেটে ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য কিছু পদক্ষেপ থাকলেও বীমা খাতের ডিজিটালাইজেশনকে কেন্দ্র করে কোনো নির্দিষ্ট বরাদ্দ বা পরিকল্পনা দেয়া হয়নি, যা ইন্স্যুরটেক স্টার্টআপ ও আধুনিক সেবাদানকারীদের জন্য একটি সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এবারের বাজেটে বীমা খাতকে আরো উদ্দীপিত করার জন্য কিছু সময়োপযোগী উদ্যোগ দেখতে চাই। বিশেষ করে করছাড় ও বীমা প্রিমিয়ামে ইনসেনটিভ প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে বীমার আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। ডিজিটাল বীমা সেবার প্রসারে নীতিগত সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে কর মওকুফের সুযোগ এ খাতকে আরো শক্তিশালী করবে। নীতিগতভাবে রেগুলেটরি প্রসেসগুলো আরো সহজ করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি আমরা আশা করছি, সরকার সচেনতামূলক প্রচারণা চালাবে যেন প্রান্তিক মানুষ বীমার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
বীমা খাতের সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে কী ধরনের সহায়তা চান?
বাংলাদেশের জন্য ২০১০ থেকে একটি ভালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে—ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) গঠন করা এবং ২০১২ সালে নতুন করে ইন্স্যুরেন্স গাইডলাইনে তৈরি করা। অবশ্য এই গাইডলাইনে ইমপ্রুভমেন্টের অনেক জায়গা আছে এবং দিন যত যাবে এ রকম গাইডলাইনকে সময়োপযোগীভাবে ইমপ্রুভমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আইডিআরএ এরই মধ্যে ইউএমপি সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ আরো সহজীকরণের কাজ শুরু করেছে।
ডিজিটাল ডেভেলপমেন্টকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং যে কোম্পানিগুলো একটু দুর্বল অবস্থানে আছে, তাদেরকে সাহায্যের মধ্য দিয়ে কাস্টমার সার্ভিসকে আরো দ্রুত ও সহজ করার জন্য সরকারের কাছে আশা ব্যক্ত করছি। আরো একটি বড় কাজ করার জায়গা হলো, অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুড গভর্ন্যান্সের অভাবে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং অনেক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেই কমপ্লায়েন্স ও লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট দুটি থাকে না। আমার মনে হয়, রেগুলেটরদের এ জায়গাগুলোয় কাজ করতে হবে। তাছাড়া কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়েও গাইডলাইনে কাজ করতে হবে, যেন দিনশেষে আমাদের গ্রাহকদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
নাফিস আকতার আহমেদ
চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, শান্তা লাইফ ইন্সিউরেন্স লিঃ
Ref: https://bonikbarta.com/magazine/budget_2025-26/1hkeLgIpXFuVnfZa